৳ 0.00

No products in the cart.

Wednesday, September 11, 2024

Dhaka, Bangladesh

info.pencilpublications@gmail.com

Hot Line : +88 01723038230

৳ 0.00

No products in the cart.

শান্তি

ফৌজিয়া ইয়াসমিন ইভা।

More articles

মেঘলা দেখলো ফেসবুকে, রুমা তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছে! রুমার সাথে যোগাযোগ নেই বেশ কয়েক বছর।রুমা ওর বান্ধবী! রুমার বিয়ে হয়েছিলো অবস্থাশালী এক ব্যবসায়ীর সাথে। বিয়ের দু বছর পর রুমা বিদেশে চলে গিয়েছিলো… কিছুদিন যোগাযোগ ছিলো…তারপর আস্তে আস্তে সংসারের ঝামেলায় যোগাযোগ তলানিতে ঠেকেছিলো।

হঠাৎ রিকুয়েষ্ট দেখে অবাক হয়েছে!রুমার বিয়ের পর ওর দেমাক বেড়ে আঁকাশে ঠেকেছিলো! রুমা সব সময় প্রার্চুয্যর

অভিলাষী ছিলো।বিয়ের পর ওর আচরনে অনেকেই ওকে এড়িয়ে চলতো।তবে সহজ, সরল মেঘলা সেটা পারে নাই! শত হলেও বান্ধবী!এতদিন পরে রিকুয়েষ্ট দেখে একসেপ্ট করবে কি করবে না,এটা নিয়ে দ্বিধা বোধ করছে! কিছুক্ষন চিন্তা করে একসেপ্ট করে নিলো।

এরপর ওর প্রোফাইলে ঢুকলো।কয়েক বছর পরে ওকে ছবিতে দেখলো।সেই রকম সুন্দরীই আছে! তবে চড়া মেকাপে আসল চেহারার লাবন্য ঢাকা পরেছে। রুমার ছবি দেখে মনে হচ্ছে ওর জীবন বেশ বর্নিল! বিভিন্ন ক্যাপশনে নানা রকমের ছবিতে ওর ফেসবুক ভরপুর।বেশির ভাগ ছবিই ওর উচ্চবিত্ত জীবন যাপনের কথা বলছে!

মেঘলা একটু জেলাস ফিল করলো! ওর এই মধ্যবিও জীবন বড় সাদা মাটা! দুই ছেলে, মেয়ে আর নাশিদকে নিয়ে ওদের সংসার।ওর শশুর শাশুড়ি গ্রামে থাকেন। নাশিদ সেখানে টাকা পাঠায়। মেঘলার স্কুলের চাকরিতে বেতন কম।দুজনের আয়েও মাস শেষে সংসার খরচে টানা টানি পরে যায়।

তবে মেঘলা সুগৃহিনীর মত তা সামাল দেয়।ছোট বেলায় মাকে দেখেছে প্রতিবেলার রান্নার সময় এক মুঠো চাল আলাদা করে রেখে দিতে! মাস শেষে যদি টানাটানি হতো তবে সেই জমানো চালে ভাত রান্না হতো! তখন বুঝতে না… কিন্তু এখন বোঝে মধ্যবিও সংসারের জন্য এটি কত বড় একটা শিক্ষা!

বাচ্চা দুটো সরকারী স্কুলে পড়ছে বলে রক্ষে! না হলে বেসরকারী স্কুলের যা বেতন তাতে পড়ালেখা বাদ দেওয়ার উপক্রম! সংসারের কাজ ওরা সবাই মিলে করে।তারপরও ভারি কাজগুলোর জন্য এক জন ছুটা খালা রেখেছে!

মেঘলা দুপুরের এ সময়টায় ফোনটা নিয়ে ফেসবুক দেখে! ও অবশ্য ফেসবুক একাউন্ট খুলেছে খুব বেশি দিন না! মাঝে মাঝে কিছু সাহিত্য নির্ভর গ্রুপে ঢুকে গল্প পড়ে! ভালই লাগে! আজ রুমার পোষ্টগুলো দেখে মন কেমন বিষাদগ্রস্থ!শেষে ফোন বন্ধ করে দিলো। ভাবলো, সবার ভাগ্য এক না!যে যার ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে! খামোখা মন খারাপ করে লাভ নেই।

সন্ধ্যায় নাশিদ ফিরলো…বাসে আসতে ওর বেশ কষ্ট হয়! কিন্তু কি করবে? গোনা টাকায় চলতে হয়।সৎ একজন মানুষ। যে চাকরি করে তাতে অসাদুপায়ে টাকা রোজগার করতে পারে…কিন্তু সেটা নাশিদ এবং মেঘলা চিন্তাও করতে পারে না।মেঘলা রান্না ঘরে ঢুকে নাস্তার প্লেট আনলো! আজ ও ছাদে লাগানে মিষ্টি কুমড়ার ফুল চালের গুঁড়ায় ডুবিয়ে ভেজেছে মুচ মুচে করে।বাচ্চারা খেয়ে পড়তে বসেছে।

নাশিদ হাত মুখ ধুয়ে এলো! বড়া দেখে খুশি ! মেঘলা

দু কাপ চা নিয়ে এলো! নাশিদ বলল, খাওনি? মেঘলা বলল, তোমার জন্য আপেক্ষা করছিলাম…সারাদিন তো আমরা সবাই ব্যস্ত! এ সময়টুকু এক সাথে কাটাই ভাল লাগে।

এভাবেই রাত হয়ে গেলো! রাতের সব কাজ ওরা চার জন মিলেই করে! বাচ্চাদের মেঘলা শিখিয়েছে..প্লেট ধোয়া, টেবিল লাগানো, বিছানা গুছানো ইত্যাদি! সাথে নাশিদও সাহায্য করে।সব শেষে ওরা ঘরে এলো।

মেঘলা ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে ফোনটা হাতে নিয়ে নাশিদকে বলল, আজ আমার এক পুরানো বান্ধবী রুমা আমাকে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে ছিলো…এর মাঝে নাশিদ বলল, তুমি যার কথা বলেছিলে বিদেশে থাকে? মেঘলা বলল, হ্যা। ঠিক এমন সময় ম্যাসেন্জারে কল এলে.. মেঘলা দেখলো রুমা! নাশিদ বলল, ধরো! তুমি বলতে বলতেই ফোন চলে এসেছে! এরপর যোগ করলো, দু বান্ধবী গল্প করো আমি বরং ঘুমাই, কাল একটু তাড়া তাড়ি বেরুবো!

রুমা হ্যা বলে ফোন নিয়ে ওর ছোট্র বারান্দায় চলে এলো।

ফোন ধরে বলল,

-মেঘলা, কিরে কেমন আছিস? কত দিন পরে যোগাযোগ হলো!

-রুমা, ভাল আছি। তুই কেমন আছিস? আমি তো কয়েক বছর আগেই ঢাকায় চলে এসেছি! তোর খোঁজ করেছি কিন্তু

পাইনি! ফেসবুকে অনেকবার সার্চ দিয়েছে সেখানেও তোর কোন পাওা নেই! শেষে আজ পেলাম।

-মেঘলা, ভাল আছি! আমি ফেসবুক একাউন্ট খুলেছি খুব

বেশিদিন না।

এভাবে ওরা বেশ কিছুক্ষণ কথা বলল।মেঘলার হাই উঠছে… সেই কোন সকালে উঠেছে! বুঝতে পেরে রুমা হাসলো! তুই এখনো জলদি ঘুমিয়ে পড়িস? মেঘলা বলল, হ্যারে! এরপর বিদায় জানিয়ে ঘরে এলো।ভালই লাগলো রুমার সাথে কথা বলে।

এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেলো! এখন প্রায়ই রুমার সাথে কথা হয়।বেশির ভাগ গল্প রুমাই করে। কোথায় গেলো, কি করলো, কি কিনলো ইত্যাদি নানা রকম গল্প। রুমা একদিন বলল, ওর বাসায় যেতে। মেঘলা বলল, যাবো তবে তোকেও একদিন আমার বাসায় আসতে হবে।রুমা বলল, ঠিক আছে আসবো তবে আগে তুই আয়।

মেঘলা ভাবচ্ছিলো, এত বড়লোকের বাসায় যাওয়াও সমস্যা!তার উপর রুমা যেমন বড়লোকি করে তাতে ওর বাসায় যেতেই ভয় লাগে ! শেষে না পেরে নাশিদকে বলল, সব কথা। নাশিদ হেসে বলল,আরে দুর! কে বড়লোক তাতে তোমার কি? তুমি যে অবস্থানে আছো সেটাই সবার কাছে তুলে ধরবে… তাতে সম্মানহানি হয় না… বরং বাড়ে! আর সত্যকার ধনী সেই যে শান্তিতে আছে! তোমার এ হিন্যমন্যতা ছাড়ো!

মেঘলার কাছে নাশিদের কথা গুলো খুব ভাল লাগলো! ওর সব দ্বিধা দুর হয়ে গেলো।

একদিন বিকেলে ঠিকানা নিয়ে রুমার বাসায় পৌছে গেলো।অভিজাত এলাকার ফ্ল্যাট বাড়ি! মেঘলা লিফটে করে চার

তলায় উঠে এলো! রুমার ফ্ল্যাটে বেল দিলো.. বাইরেও সুন্দর করে সাজানো…কিছু গাছও রাখা আছে! দরজা খুলে দিলে বাসার গৃহকর্মী মেয়ে … প্রশ্ন করলো কাকে চান? উওরে মেঘলা রুমার কথা বলতেই মেয়েটা বলল, ভিতরে আসেন।

ভিতরে ঢুকে মেঘলা দেখলো ঝা চক চকে একটা ফ্ল্যাট বাসা! মেয়েটা ওকে নিয়ে ড্রয়িং রুম পেরিয়ে লিভিং রুমে নিয়ে আসলো! মেঘলা লিভিং রুমের নরম তুল তুলে সোফায় বসলো! এমন সময় ভিতরের একটা ঘর থেকে উচ্চ স্বরের কথা ভেসে আসলো…শব্দে টের পাওয়া যাচ্ছে ঝগড়া চলছে… চিৎকার চেঁচামেচি বেড়েই যাচ্ছে ! মেঘলা বুঝতে পারছে না কি করবে? মেয়েটা বলল, আপনে বসেন…বলে চলে গেলো! রুমাকে ডাকার সাহস বোধ হয় ওর হলো না! মেঘলা ভাবলো কি একটা অবস্থায়

পরলাম… এর চাইতে চলেই যাই!

এমন সময় ঝন ঝন শব্দে কাঁচ ভাঙার আওয়াজ এলো! পর মুহূ্র্তে রুমার স্বামী ঘর থেকে বেরিয়ে কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে গট গট করে হেটে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলো! মেঘলা ঘরের ভিতরে কান্নার শব্দ পেলো!

ও বুঝতে পারছে না কি করবে?শেষে উঠে ঘরের ভিতর উকি দিলো!দেখলো রুমা মেঝের উপর বসে আছে! তার চতুর্দিকে কাঁচের টুকরো ছড়ানো.. মেঘলা দেখে বুঝলো টেবিলের কাঁচ ভেঙেছে… টেবিলের পাশে একটা ঝকঝকে ব্রাসের ফুলদানী পরে আছে! সমম্ভত রুমাকে লক্ষ্য করে মেরেছে… কারন রুমার কপাল কেটে রক্ত ঝরছে!

মেঘলা ভিতরে ঢুকলো.. রুমা ওকে দেখতে পেলো।ওকে দেখে রুমা আরো জোরে কেঁদে উঠলো! মেঘলা এগিয়ে গিয়ে রুমাকে উঠিয়ে বিছানায় বসালো… তারপর বলল, এ সব কি? তোর কপাল কেটে গেছে… বাসায় ফাষ্ট এইড বক্স আছে?

রুমা ওরনা দিয়ে রক্ত মুছে বলল, কিছু লাগবে না! আমার

এ সব সয়ে গেছে!

মেঘলা বলল,তুই এ সব সহ্য করে এখানে আসিছ কেন? আর আসল ঘটনাটাই বা কি?এবার মেঘলা সব কথা খুলে বলল….

বিয়ের দু বছর পর ওর স্বামী ওকে বিদেশ নিয়ে গেয়েছিলো.. সেখানে ভালই ছিলো। ওর ছেলের জন্ম ওখানেই।এরপর হঠাৎ দেশে চলে আসে। এরপর শুরু করে অসাদু উপায়ে বিভিন্ন ব্যবসা। শুরু হয় কাঁচা টাকা আসা… আর আস্তে আস্তে ওর স্বামীও বদলাতে থাকে।এক সময় পরকীয়ায় জড়িয়ে পরে। সেটা নিয়ে প্রায় দিনই ঝগড়া হয়… ওর স্বামী এখন প্রায়ই ওর গায়ে হাত তুলে!

রুমা সব কথা বলে বেশ কিছুক্ষণ কাঁদলো! তারপর বলল,

আমাকে ফেসবুকে দেখে সবাই ভাবে আমি কত সুখে আছি

কিন্তু তা সত্য নয়! পোষ্ট গুলো দেই আমার কষ্ট ঢাকতে! ভাবি সবাই দেখুক আমি কত ভাল আছি! কিন্তু আমি ভাল নেইরে!

মেঘলা ওর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো…রুমার এই ঝা

চকে চকে ফ্ল্যাটটাকে হঠাৎ ওর কাছে বড় জীর্ন শীর্ন বলে মনে হলো…মেঘলা এবার উঠে দাড়ালো! তারপর বলল, আমি কি বলবে বল? তোকে এ পরিস্থিতি থেকে বের করে আনার ক্ষমতা আমার নেই… তবে যদি মনে করিস তুই এখান থেকে বের হয়ে আসবি তবে আমাকে পাশে পাবি! এটুকু বলে ও রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো।

মেঘলা বাসার চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো…প্রাচুর্য্যের ছড়া ছড়ি! কিন্তু তবু এ বাসায় কি যেন একটা নেই! যা মেঘলার বাসায় আছে। মেঘলা ভেবে পেলো না সেটা কি?

মেঘলা বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।বেল দিতেই নাশিদ এসে দরজা খুললো… হাসি মুখে বলল, কি বান্ধবীর সাথে দেখা হলো? মেঘলা ভিতরে ঢুকে বলল, হ্যা! ততোক্ষনে মেঘলার বাচ্চারাও এসে মাকে জড়িয়ে ধরেছে! মেঘলা ওর এ ছোট্র অতি সাধারন বাসার চারিদিকে দৃষ্টি বুলালো… দেখলো প্রাচুর্য্যের লেশ মাত্র নেই!তবে যেটা আছে সেটা মহার্ঘ শান্তি! শান্তিতে ভরপুর এ অতি সাধারন ছোট্র বাসাটা! আর তাতে বসবাস করা মানুষ গুলোর অন্তর! যার প্রকাশ সবার অবয়বেই প্রকাশ পাচ্ছে!

মেঘলা হঠাৎ বুঝতে পারলো… রুমার বাসায় যা নাই তা হচ্ছে শান্তি! নাশিদের কথাটা মনে পড়লো,

সত্যিকার ধনী সে, যে শান্তিতে আছে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest